
দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়লেও কমানো হয়েছে বরাদ্দ
দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়লেও কমানো হয়েছে বরাদ্দ
- আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৭:০৮:৫৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৭:০৮:৫৫ অপরাহ্ন


জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েছে। বিগত ৩০ বছরে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা মোকাবেলায় প্রত্যাশিত হারে বরাদ্দ বাড়েনি। বরং নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ কমছে। বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য ৪১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির মাত্র ০.৬৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে ৪২ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। অর্থাৎ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে। এমনকি বিগত বছরগুলোতেও ধীরে ধীরে কমানো হয়েছে জলবায়ু বাজেট। পরিবেশবিদদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, দেশে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে পড়ছে। ফলে প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও খরায় মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষি ও জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ প্রতিবছরই কমানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির মাত্র ০.৬৭ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় অন্তত জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দের।
সূত্র জানায়, ছোট-বড় অন্তত ৩৩টি ঘূর্ণিঝড় বিগত ৬০ বছরে এ দেশে আঘাত হেনেছে। শেষ ১৫ বছরে অন্তত ৯টি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ব্ন চলতি বছরের ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় শক্তি ও ২০২৪ সালের ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানে। এর আগে ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মোখা, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, ২০২১ সালের ২৪ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ২০০৯ সালে আইলা, ২০০৭ সালে সিডর উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (বিসিসিএসএপি-২০০৯) অনুযায়ী, অভিযোজন খাতে বছরে আট হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রয়োজন ৩৮ বিলিয়ন ডলার এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (ন্যাপ) বছরে বরাদ্দ লাগবে ৮.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় গৃহীত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যে বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন, বার্ষিক বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু খাতের জন্য বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। ঝুঁকি মোকাবেলায় জলবায়ু পরিবর্তন খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেন তাঁরা।
অন্যদিকে জাতীয় বাজেটে টেকসই উন্নয়ন জলবায়ু অর্থায়ন বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ হয় ৩২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা (জিডিপির ০.৭২ শতাংশ) এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছর দেয়া হয় ৩৭ হাজার ৫১ কোটি টাকা (জিডিপির ০.৭৩ শতাংশ)। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণায় অর্থ উপদেষ্টা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় নারীর অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় ইকোসিস্টেম মূল্যায়ন, জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনে গণমাধ্যমের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ প্রতিরোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রশমন, স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ